টাঙ্গাইল দেলদুয়ার উপজেলার গোমজানী পালপাড়া গ্রামে রয়েছে ৪০টি পাল পরিবার। এর মধ্যে ৭টি পাল পরিবার খেলনা পুতুল তৈরির কাজে সম্পৃক্ত। এদেরই একজন বিলাসী রানী পাল (জন্ম ১৯৪৭)। তাঁর বাবার বাড়ি চারুটিয়া পালপাড়া, টাঙ্গাইল। সেখানে বাবা গুরুচরণ পালের কাছে পুতুল তৈরি করা শিখেন। স্বামীর বাড়ি এসেও তিনি এই কাজে নিযুক্ত রয়েছেন। দীর্ঘ ৬৫ বছর যাবত তিনি নানা ধরনের পুতুল তৈরি করছেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে মা ও শিশু, হাতি, ঘোড়া, চাকাওয়ালা হাতি, চাকাওয়ালা ঘোড়া, চাকাওয়ালা মহিষ প্রভৃতি। বৈশাখি মেলা উপলক্ষ্যে তিনি পুতুল তৈরি করেন। ২০১৬ সালে এক বৈশাখি মেলায় তাঁর নাতি বিজয় পাল মাটির কিছু পুতুল নিয়ে বসেছিল, তখন আমি তার কাছে জানতে চাই এই পুতুল কে তৈরি করেছে? তখন সে বলে আমার ঠাকুরমা বিলাসী রানী পাল। তখন আমি তার কাছ থেকে বিলাসী রানীর ঠিকানা সংগ্রহ করে একদিন সেখানে যাই এবং বিলাসী রানীর সাথে কথা বলি। তখন তিনি আমাকে পুতুল তৈরি করে দেখান। হাত দিয়ে পুতুল তৈরি করে একটু শক্ত হওয়ার পর কাঠি দিয়ে চোখ, মুখ, হাত, পায়ে লাইন করা হয়।
তারপর কাঁচা পুতুল ছায়ায় শুকিয়ে পরে আবার রোদে শুকানো হয়। পুতুলের গায়ে এক ধরনের আঠার প্রলেপ দেওয়া হয়, এই আঠা তৈরি হয় লাল মাটি, সোডা, খয়ের একসাথে মিশিয়ে চুল্লিতে জ্বাল দিয়ে। পুতুলগুলো চুল্লিতে পোড়ানোর পর যে রং থাকে তাই রাখা হয়, বাড়তি কোনো রং ব্যবহার হয় না। তাঁর তৈরি পুতুলের মূল্য ৫ টাকা থেকে ১০০ টাকা। কিছুদিন আগে তাঁর ছেলে সুভাস পালের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম তাঁর মা বিলাসী রানী পাল এখন বয়সের ভারে আর আগের মতো এত পুতুল তৈরি করেন না। তাছাড়া এখন চোখেও ঠিকঠাক আগের মতো দেখতে পান না। তারপরেও তিনি আমাকে কিছু পুতুল তৈরি করে দেন। তাঁর ছেলে বলেন বর্তমানে পুতুলের চাহিদা আগের মতো নেই, এখন আর মাটির পুতুল কেউ কিনতে চায় না। বাজারে ও মেলাতে প্লাস্টিকের খেলনা পুতুলের চাহিদা অনেক বেশি। প্রায় ৩/৪ বছর ধরে তারা কেউ মেলায় পুতুল নিয়ে যায় না, গ্রামের বাচ্চাদের খেলার জন্য তিনি কিছু পুতুল তৈরি করেন। আবার কেউ যদি বলে তাহলে তিনি পুতুল তৈরি করে দেন।
লেখাঃ টিটু সাহা