
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছায়াঘেরা ক্যাম্পাসে ২৬ জুন, বৃহস্পতিবারের সকালটা ছিল একটু আলাদা। প্রতিদিনের মতো ভিড়, হাঁটা, ক্লাসের তাড়া—তার মাঝেই চোখে পড়ল এক অন্যরকম দৃশ্য। কাঁধে ব্যাগ, চোখে স্বপ্নের দীপ্তি, মুখে অদম্য এক দৃঢ়তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে পা রাখলেন ইতি গৌড়। শুধু আর দশজন শিক্ষার্থীর একজন নন, ইতি যেন পুরো মৌলভীবাজারের বরমচাল চা বাগানের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া এক সাহসী নাম।

ইতি গৌড়—একজন চা শ্রমিকের কন্যা। শৈশব কেটেছে বাগানের ঘ্রাণ মাখা জীবনে, যেখানে শিক্ষার আলো অনেকটাই ক্ষীণ। তবে সেই ক্ষীণ আলোকে পথের দিশা করে নিয়ে আজ তিনি দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে জায়গা করে নিয়েছেন। এই প্রথম, বরমচাল চা বাগান থেকে কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেন। আর সেই গর্বের পতাকা হাতে তুলে নিলেন ইতি।
ইতির এই জয় শুধু তার একার নয়। এটি এক সংগ্রামী মা-বাবার আত্মত্যাগের ফসল, একটি অবহেলিত জনগোষ্ঠীর অদেখা স্বপ্নের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। সেই বাগানের শতশত কিশোরী, যারা এখনও স্কুলে যাওয়া নিয়ে লড়ছে, তাদের জন্য ইতি যেন আলোর দিশারী।
“আমি শুধু নিজের জন্য না, পুরো বাগানবাসীর মুখ উজ্জ্বল করতে চাই,” চোখেমুখে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে বলেন ইতি।
এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে শিক্ষকদের আন্তরিকতা, সহপাঠীদের ভালোবাসা আর সর্বোপরি নিজের অধ্যবসায়। যেখানে প্রতিদিনের সংগ্রাম ছিল লেখাপড়ার সাথেই বাঁচার যুদ্ধ—সেই যুদ্ধেই জয়ী হয়েছেন ইতি।
আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রৌদ্রছায়ায় ঘেরা ক্যাম্পাসে শুধু একজন নতুন শিক্ষার্থীর আগমন হয়নি, এসেছে একটি নতুন ইতিহাস।