Friday, June 9, 2023
Home করোনা আপডেট গণটিকাদান কর্মসূচি: প্রত্যাশা বাড়িয়ে হতাশা ছড়ালো

গণটিকাদান কর্মসূচি: প্রত্যাশা বাড়িয়ে হতাশা ছড়ালো

রাজধানীর মগবাজারের দিলু রোডের একটি বিদ্যালয়ে গণটিকাদান কর্মসূচির তৃতীয় দিনে টিকা নিতে যান ৩৪ বছরের রুমা আক্তার। প্রথম দিন ভোরে গিয়ে বেলা ১২টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। কিন্তু টিকা পাননি। পরদিন ভোর সাড়ে পাঁচটায় আবার লাইনে দাঁড়ান। সেদিন কোনোমতে টিকা দিয়ে বাসায় ফেরেন। কিন্তু রুমা আক্তারের আশেপাশের অনেকে দুদিন দাঁড়িয়েও টিকা নিতে পারেননি।

রুমার ভাষ্যে, ‘মুখ চেনা হলে টিকা দিচ্ছে, নয়তো দিচ্ছে না। আমার ভাগ্য ভালো, আগের দিন ওরা কার্ড রেখে দিয়েছিল। পরদিন তাই টিকাটা পেয়েছি।’

মগবাজারের মধুবাগের বাসিন্দা সাথী আক্তার। বাড়ির পাশেই টিকাদান কেন্দ্র। কিন্তু লাইনে দাঁড়াননি। বাড়ির পাশেই টিকা দিচ্ছে, অথচ নিতে যাননি কেন জানতে চাইলে সাথী বলেন, ‘লাইনে মারামারি, ভিড়। তারমধ্যে আবার রোদে দাঁড়িয়ে কয়েকজন অজ্ঞানও হয়ে গেছে। এসব দেখে আর আগ্রহ পাইনি।’

ওয়ার্ডের ভোটার না হলে টিকা নয়!

৯ আগস্ট গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। ১১ আগস্ট রাজধানীর কল্যাণপুর গালর্স স্কুলের টিকাকেন্দ্রে আসা সকিনা বেগম টিকা নিতে টানা তিনদিন লাইনে দাঁড়িয়েছেন। শেষ দিন পাঁচঘণ্টা দাঁড়িয়ে টিকা নিতে পেরেছেন। তার অভিযোগ- অনেকেই লাইন ছাড়া টিকা নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলের পরিচিত কিংবা দলীয় নেতাকর্মী বা তাদের স্বজনরা এ সুযোগ পাচ্ছে। জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার পরও ওয়ার্ডের ভোটার না হওয়ায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে  অনেককে।

ওই কেন্দ্রের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ‘ওয়ার্ড কাউন্সিলের নির্দেশ রয়েছে, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার না হলে টিকা দেওয়া যাবে না। বাইরের কেউ এলে তাদের বলা হচ্ছে, তিনি যেখানকার ভোটার সেই কেন্দ্রে টিকা নিতে।’

১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হলেও রাফসানা বেগম বরিশালের ভোটার। তাই তাকে সেদিন টিকাকেন্দ্র থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘টিকার ঘোষণায় তো বলা হয়েছে আইডি কার্ড নিয়ে যেতে। আমি কোথাকার ভোটার সেটা এখানে বিবেচ্য নয়। এখন আমার পক্ষে তো বরিশাল যাওয়া সম্ভব নয়।’

স্বাস্থ্যবিধি না মানাসহ অসংখ্য অভিযোগ নিয়ে ৭ আগস্ট শুরু হওয়া গণটিকাদান কর্মসূচি শেষ হয় ১২ আগস্ট। এ সময়ে দুই ডোজ মিলিয়ে ৫৮ লাখ ২ হাজার ৬৬৬ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। গত ১২ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো টিকাদান বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।

টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগে অধিদফতর জানিয়েছিল, এ সাতদিনে ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার টার্গেট করে দেশের চার হাজার ৬০০টি ইউনিয়নে, এক হাজার ৫৪টি পৌরসভায় এবং সিটি করপোরেশন এলাকার ৪৩৩টি ওয়ার্ডে ৩২ হাজার ৭০৬ জন টিকাদানকারী এবং ৪৮ হাজার ৪৫৯ জন স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে একযোগে কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া হবে।

অধিদফতর জানায়, ৭ আগস্ট টিকা দেওয়া হয়েছে ৩১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬ ডোজ। ৮ আগস্ট দেওয়া হয় ৭ লাখ ৪৬ হাজার ২৪৮ ডোজ। ৯ আগস্ট ৬ লাখ ৩১ হাজার ৩৮২ ডোজ, ১০ আগস্ট ৪ লাখ ৮৮ হাজার ১৫৮ ডোজ, ১১ আগস্ট ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৮৭ ডোজ এবং বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) দেওয়া হয় ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৮৭৩ ডোজ। ছয়দিনে মোট ৫৮ লাখেরও বেশি ডোজ দেওয়া হয়েছে।

অধিদফতর জানায়, সেদিন পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৩ কোটি ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৬ জন।

টিকাদানে সক্ষমতা যাচাই কতটুকু হলো জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘টিকার সাপ্লাই অব্যাহত থাকলে সবাইকে টিকা দিতে পারবো, এটুকু বলতে পারি। আমাদের সক্ষমতা রয়েছে। যদিও কিছু সমস্যা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। তবে যেহেতু প্রথমবারের মতো, এটুকু হতেই পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু জায়গায় মানুষ বেশি চলে এসেছে, সে পরিমাণ টিকা আমরা দিতে পারিনি। এগুলো নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য এসেছে।’

‘কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, আমরাতো ফিক্সড করে দিয়েছিলাম যে এই সেন্টারে এতটাই টিকা দেব, এর বেশি দেবো না।’ যোগ করেন তিনি।

এদিকে স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক এ বি এম খুরশিদ আলম বলেন, ‘এটা একটা অভিজ্ঞতা হলো। আমরা মনে করি আমাদের ক্যাপাবিলিটি আছে। যে অসুবিধাগুলোর মুখোমুখি হয়েছি, সেগুলো মাথায় রেখে ভবিষ্যতে যখন আবার টিকা দেবো তখন আশা করি ভোগান্তি ছাড়াই দেওয়া যাবে।’

একই মানুষকে দুই প্রতিষ্ঠানের টিকা প্রদান সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই কর্মসূচিতে ৫৮ লাখ টিকা দেওয়া হয়েছে এবং সেখানে কেবল এক ধরনের টিকাই ছিল না। একই সেন্টারে অনেক রকমের টিকা দেওয়া হয়েছে। এগুলো আমরা নজরে এনেছি। ভবিষ্যতে এরকম হবে না।’

গণটিকাদান কর্মসূচি আবার কবে শুরু হবে জানতে চাইলে অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, ‘ফিক্সড কিছু বলা যাবে না। সব নির্ভর করছে টিকা প্রাপ্তির ওপর। সারাবিশ্বেই এখন টিকা নিয়ে রাজনীতি চলছে, তাই অনেক কিছু এখানে জড়িত। তবে যারা এবারে প্রথম ডোজ পেলেন তাদের সাত সেপ্টেম্বর থেকে দ্বিতীয় ডোজ দিতে পারবো, এমনটা আশা করছি।’

গত ফেব্রুয়ারিতে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর টিকা নিতে মানুষের আগ্রহ থাকলেও অনেকেই ‘কী হয় দেখা যাক’ ভেবে বসে ছিলেন। দেশের কিছু জনগোষ্ঠী নানা কারণেই টিকার আওতায় আসছিলেন না।

তবে আগের তুলনায় গণটিকাদান কর্মসূচিতে মানুষের প্রত্যাশা ছিল অনেক। সাধারণ মানুষের সে প্রত্যাশার কতটা পূরণ হলো জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক ও জাতীয় টিকা পরামর্শক কমিটি (ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপ) নাইট্যাগ-এর সদস্য অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘টিকা নিতে মানুষের যে বাধাগুলো ছিল, সেসব সরকারও কিছু দূর করেছে। আবার মানুষের যে অনাগ্রহ ছিল সেখানে কিছুটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে।’

‘তবে সরকারের ভুল মূল্যায়ন ছিল। যেমন-গণটিকা মানে যারা টিকা নিতে আসবে তারাই পাবে- এমনটা প্রচারের ফলে মানুষের প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছিল’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সে অনুযায়ী টিকা হবে না, সেটাই স্বাভাবিক। যার কারণে অনেকে টিকাকেন্দ্রে গিয়ে টিকা পায়নি। ব্যবস্থাপনাটা আরেকটু ভালো হওয়া উচিত ছিল। আগেই বোঝা উচিত ছিল, মানুষের আগ্রহ বাড়বে। তালিকা ধরে টিকা নিতে আসার কথা বলা হলে, এমনটা ঘটতো না।’

ডা. বে-নজির আরও বলেন, ‘উপজেলা-ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের রাজনীতির বিষয় রয়েছে এখানে। তিনি নিজে টিকা দিতে চেয়েছেন। এভাবে অনেকেই অনেকভাবে ভেবেছেন। যার কারণে সব মিলিয়ে ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হয়েছে।’

SourceBTribun

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

শোক হোক নতুন প্রজন্মের শক্তি -জি.বি.এম রুবেল আহম্মেদ।

“আগষ্ট তুমি ভয়াবহ কলঙ্ক আর অপমান, তোমার মাঝেই হারিয়েছি

নীলাঞ্জনা তোমার জন্মদিন-মমিনুল ইসলাম

নীলাঞ্জনা তোমার জন্মদিন কলমেঃ মমিনুল ইসলাম তোমার জন্য আরো একটি-নতুন দিগন্তের সাক্ষী হতে চলছে,চারদিকে নীল...

ই অর্গানিক শপ এখন জামালপুরে

Managing a group of researchers is like handling a herd of cats. Every single person of the group has their own...

বিল -জলাশয় রক্ষা করুন

Board room online programs help you control all aboard related tasks and documents efficiently and quickly. They feature tools designed for managing getting together...

Recent Comments

error: Content is protected !!