২৭ বছর পর বাড়ি ফিরলেন হারিয়ে যাওয়া শাহীদা

মতিন রহমান।জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার নিলাক্ষিয়া ইউনিয়নের দিকপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম খলিল ও ছাবেদা বেগম দম্পতির হারিয়ে যাওয়া মেয়ে শাহীদা আক্তার ২৭ বছর পরে বাড়ি ফিরে এসেছেন। মাত্র ৬ বছর বয়সে শাহীদা আক্তার ঢাকার উওরা এলাকা থেকে হারিয়ে যায়।সেই সময় অনেক খুঁজাখুঁজি করেও মেয়েকে ফিরে পাননি শাহীদা আক্তারের বাবা-মা।

দীর্ঘ ২৭ বছর পর সেই হারিয়ে যাওয়া শাহীদা আক্তার ফিরে এসেছেন তাদের নিজ বাড়িতে। তবে বাড়ীতে ফিরে জানতে পারেন তার বাবা-মা আর বেঁচে নাই। ৪ বছর আগে মা ও ২ বছর আগে বাবা মারা গেছেন।তবে তার দুই বোন ও একটি ভাই রয়েছে।

মঙ্গলবার(১৬ এপ্রিল) তার বড় বোন খালেদা আক্তারের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, দুই বোন ও ভাই আলামিন ও শাহীদা আক্তার একে অপরকে দেখে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরে কান্না করছেন। এ সময় আবেগঘন একটি মুহূর্তের সৃষ্টি হয়। বর্তমানে শাহীদা তার বড় বোন খালেদার বাড়িতে আছেন।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,মৃত ইব্রাহিম খলিল ও ছাবেদা বেগম দম্পতির অভাব-অনাটনের সংসার ছিল। এলাকায় তেমন কোনো কাজকর্ম না থাকায় কর্মের আশায় ১৯৯৭ সালে সন্তানদের নিয়ে ঢাকার উত্তরায় চলে যান। সেখানে তার বাবা রিকশা চালাতেন। ঢাকায় যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে ছোট্ট শাহীদা লাকড়ী কুড়াতে গিয়ে হারিয়ে যান। তার বাবা-মা তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করলেও তার কোনো সন্ধান পাননি। এরপর থেকে শাহীদা নিখোঁজ ছিল। নিখোঁজ হওয়ার পর কিভাবে যেন শাহীদা চট্টগ্রামে চলে যান। সেখানে এক বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন।

শাহীদা আক্তার বলেন,একটি সংবদ্ধ প্রতারক চক্র আমাকে চট্টগ্রামে নিয়ে বিক্রি করে দেয় তারা আমাকে দিয়ে গৃহকর্মীর সকল কাজ করতেন।একটু এদিক-সেদিক হলেই অকথ্য গালিগালাজ ও শারীরিক নির্যাতন করতেন। শারীরিক নির্যাতন সয্য করতে না পেরে একদিন সেখান থেকে পালিয়ে যাই পরে ফায়ার সার্ভিসে চাকরী করে তিনি আমাকে তার বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে দীর্ঘদিন আমি অনেক ভালো ছিলাম।তারাই আমাকে গাজীপুরে সেলিম মিয়ার সঙ্গে বিয়ে দেন। আমি জীবনেও কল্পনা করিনি নিজের গ্রামে ফিরতে পারব। আমার ভাই-বোনদের সঙ্গে দেখা করতে পারব। প্রায় সময় বাবা-মা ও পরিবারের কথা মনে পড়ত। সম্প্রতি আমার মেয়ে নানা-নানীর কথা জানতে চাইলে ও মেয়ের নানা রকম জিজ্ঞাসাবাদে হঠাৎ বকশীগঞ্জের দিকপাড়া নামটি মনে পড়ে যাই। তখন থেকে বকশীগঞ্জের দিকপাড়া খুঁজতে থাকি। বাবা-মাকে দেখার জন্যই খুঁজতে খুঁজতে এই গ্রামে চলে আসি।কিন্তু আমার মনে আশা পূরণ হলো না। কারণ আমার বাবা-মা মারা গেছেন। বোন ও ভাইসহ পরিবারের অন্যান্য সবাইকে পেলাম ঠিকই। কিন্তু বাবা-মাকে পেলাম না।

এই খবর ছড়িয়ে পড়লে শাহীদাকে এক পলক দেখতে বাড়িতে ভিড় করনে গ্রামবাসী।

  • Related Posts

    সুনামগঞ্জে ব্যাপক সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ১৩ জনসহ আহত-৩০

    সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বন্দুকযুদ্ধে ১৩ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের রাড়ইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ মুহিবুর রহমান চৌধুরী…

    Read more

    Continue reading
    বকশীগঞ্জে ৩ কেজি গাঁজা সহ গ্রেপ্তার ২ 

    মতিন রহমান। জামালপুর জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি-২) এর অভিযানে ৩ কেজি গাঁজা সহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার রাতে বকশীগঞ্জ উপজেলার বাট্রাজোর ইউনিয়নের পানাতিয়াপাড়া এলাকা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে…

    Read more

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You Missed

    সুনামগঞ্জে ব্যাপক সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ১৩ জনসহ আহত-৩০

    সুনামগঞ্জে ব্যাপক সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ১৩ জনসহ আহত-৩০

    বকশীগঞ্জে ৩ কেজি গাঁজা সহ গ্রেপ্তার ২ 

    বকশীগঞ্জে ৩ কেজি গাঁজা সহ গ্রেপ্তার ২ 

    বকশীগঞ্জে বীজ বেশি দামে বিক্রয়ের দায়ে ৫ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

    বকশীগঞ্জে বীজ বেশি দামে বিক্রয়ের দায়ে ৫ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

    বকশীগঞ্জে বিএনপির নেতা আবুল কাশেমকে বহিষ্কার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

    বকশীগঞ্জে বিএনপির নেতা আবুল কাশেমকে বহিষ্কার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

    বকশীগঞ্জে বিএনপি নেতা আবুল কাশেমকে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শাণোর নোটিশ

    বকশীগঞ্জে বিএনপি নেতা আবুল কাশেমকে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শাণোর নোটিশ

    বকশীগঞ্জে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চা বিক্রেতাকে নাশকতা মামলায় ফাসাঁনোর অভিযোগ

    বকশীগঞ্জে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চা বিক্রেতাকে নাশকতা মামলায় ফাসাঁনোর অভিযোগ
    error: Content is protected !!