“আগষ্ট তুমি ভয়াবহ
কলঙ্ক আর অপমান,
তোমার মাঝেই হারিয়েছি
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাণ।
ভোর রাতে ঘাতক দল
ঢুকে জনকের বাসায়,
হত্যা করে সপরিবার
কাউকে দেয়নি রেহায়”
১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস। অশ্রুভেজা, রক্তঝরা ও কলঙ্কময় একটি দিন। দিনটি বাঙালী জাতির জন্য অভিশপ্ত ও তীব্র বেদনার। ১৯৭৫ সালের এইদিনে একদিকে ফরজের আযানের ধ্বনি কন্ঠে ভাসতেছিল অন্যদিকে বিপথগামী কালো মুখোশধারী ঘাতকের বন্দুকের গুলির আওয়াজ ধ্বনিত্ব হচ্ছিলো। ৭১’র পরাজিত শক্তি এদেশীয় দোসরদের চরম বিশ্বাসঘাতকতার কাছে বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় বিশ্বাস সেইদিন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডী ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক বাড়িতে কালো আঁধারে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছিলো।
সুবহে সাদিকের সময় পবিত্র ফরজের আযানের ধ্বনির সাথে সাথে ঘাতকের মেশিনগানের গুলির এক একটা আওয়াজ নিস্তব্ধ করে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর বাসা। অদম্য সাহস নিয়ে বের হয়ে আসেন জাতির এক সাহসী বীরপুরুষ। ঠিক তখনই ঝাঁজরা হয়ে উঠে স্বাধীন বাংলার বুক। সিঁড়িতে লুটিয়ে পড়েন বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সিঁড়িতে পড়ে থাকা দেখে দোঁড়ে আসেন তাঁর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ঘাতকরা তাকেও গুলি করে শহীদ করে দেন। সেদিন রেহায় পাননি বাসাতে থাকা পরিবারের কোন সদস্য, আত্মীয়স্বজন,পাহারাদার এবংকি কাজের লোক। তারা এক এক করে নির্মম ভাবে হত্যা করে জেষ্ঠ্যপুত্র শেখ কামাল, তাঁর স্ত্রী সুলতানা কালাম, পুত্র শেখ জামাল, তাঁর সদ্য বিবাহ করা স্ত্রী রোজি জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল সহ মোট ১৬ জনকে।
শিশুপুত্র শেখ রাসেল সেদিন খুব ভয়ে আলমারির পিছনে পালিয়েছিল। তাকে ঘাতকরা বন্দুকের নালা দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে বের করে। সেদিন শিশুপুত্র শেখ রাসেল আর্তনাদ করে বলেছিল, “তোমরা আমাকে মেরো না, আমি অন্যত্র চলে যাবো। আমি আমার পরিচয় গোপন রাখবো”- সেদিনের তাঁর এই আর্তচিৎকারে ধরণীর আকাশ বাতাস, বৃক্ষ লতা, পশুপাখি কেঁদে ছিল, তবুও ঘাতকের হৃদয়ে একটুও মায়া হয়নি। সাথে সাথে তাঁর বুকেও গুলি করে নিশ্চিহ্ন করে দেয় বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে। শুধু সেসময় দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর জেষ্ঠ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহেনা। তাঁদের প্রাণে মারতে না পেরে বঙ্গবন্ধুর বংশকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনায় তাদের তৃপ্তি হচ্ছিলো না। দেশে ফেরার পর জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণে মারার বারবার নানান ফাঁদ পেতেছে তারা। এখনো তারা বঙ্গবন্ধুর প্রদীপ ও আওয়ামীলীগকে ধ্বংস করার জন্য নানান রকম নীল নকশা তৈরী করে যাচ্ছে। আর আগষ্ট এলেই তাদের এ যাত্রা নতুন করে প্রারম্ভ হয়। রক্তের হলি খেলায় মেতে উঠে তারা।
শোককে শক্তি ভেবে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও তাঁর স্বপ্ন এদেশকে সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। হয়তো বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর স্বপ্ন তাঁর আদর্শ আমাদের সকলের মধ্যে রয়েছে। তাঁরই আদর্শের এক একজন সৈনিক হয়ে নতুন করে নতুন প্রজন্মকে শপথ নিতে হবে। নব- প্রত্যয়ে শোককে শক্তিতে রুপান্তিত করে এদেশকে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুদামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত ও শতভাগ শিক্ষিত একটি সোনার দেশ গড়তে আগামীর প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই ইতিহাসের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের আত্মা শান্তি পাবে। শান্তি পাবে এই দেশবাসী। আজকের দিনে নিন্দা জানাই সেসব ঘাতকের প্রতি, যারা তোমাকে তথা বাংলাকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। তুমি মৃত্যুঞ্জয়ী, তুমি চিরঞ্জীব মুজিব।
“তোমায় যারা হত্যা করে
নিস্তব্ধ করেছে এ দেশ,
তারাও আজ রক্ষা পায়নি
ফাঁসিতে ঝুলেছে বেশ।
মুজিব তুমি জাতির জনক
তোমার নাইতো মরন,
বেঁচে আছো সবার মাঝে
হয়ে অবিস্মরণ ” ।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু।
জি.বি.এম রুবেল আহম্মেদ, সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ৩নং গুনারীতলা ইউনিয়ন শাখা, মাদারগঞ্জ, জামালপুর।