
একটি সকাল, যেটি আর দশটা দিনের মতোই শুরু হয়েছিল- কিন্তু শেষ হয়েছিল শত স্বপ্নের মৃত্যুর মাধ্যমে। উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের শিশুরা তখন খেলায় মগ্ন, শিক্ষা আর আনন্দের নিরীহ পরিবেশে। মুহূর্তেই যেন আকাশ ফেটে নামল এক বিভীষিকা- প্রশিক্ষণরত একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পড়ল স্কুলের মাঠে। আগুনে পুড়ে গেল বই, পোশাক, স্কুলব্যাগ আর তার সাথে হারিয়ে গেল অসংখ্য নিষ্পাপ প্রাণ। এই ট্র্যাজেডি কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা নয়, এটি জাতীয় ব্যর্থতার এক নির্মম স্মারক।
এই ঘটনাটি প্রশ্ন তোলে- আমাদের আকাশ কি শিশুদের জন্য নিরাপদ?
একটি প্রশিক্ষণ বিমান কেন এমন জনবহুল এলাকায় উড়ছিল? কেন যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না? যারা এ বিমান পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন, তাদের কি যথাযথ অনুমোদন ও তদারকি ছিল? প্রতিটি প্রশ্নই আরও গভীর করে আমাদের ব্যথা, বাড়িয়ে দেয় আমাদের দায়।
আমরা এমন একটি রাষ্ট্রে বাস করি যেখানে ট্র্যাজেডির পরেই শুধু আলোচনা হয়, বিচার হয় কিছুদিন, তারপর ভুলে যাওয়া হয় সব। কিন্তু এই ঘটনায় যেসব মা-বাবা তাদের বুকের ধন হারিয়েছেন, তারা কোনোদিন ভুলতে পারবেন না সেই আর্তনাদের মুহূর্ত- যখন খেলার মাঠ পরিণত হয়েছিল মৃত্যুকূপে। যারা আহত হয়েছে, তাদের শারীরিক যন্ত্রণা হয়তো সারে একদিন, কিন্তু মানসিক ক্ষত কি কোনোদিন শুকায়?
এই দুর্ঘটনা আমাদের কাছে কেবলমাত্র একটি দুঃসংবাদ নয়, এটি একটি অ্যালার্ম- যা বলছে, এখনই পদক্ষেপ না নিলে এরকম মৃত্যুর মিছিল আরও দীর্ঘ হবে।
আমরা দাবি জানাই-
ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত অবিলম্বে শুরু হোক।
যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক—তাদের পদের উচ্চতা নয়, দায়িত্বের গাফিলতিই বিবেচ্য হোক।
আকাশপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে প্রশিক্ষণ ফ্লাইটের নীতিমালা পুনর্বিন্যাস করা হোক।
জনবহুল এলাকার উপর প্রশিক্ষণ ফ্লাইট নিষিদ্ধ করা হোক।
শোক নয়, সচেতনতার সূচনা হোক
এই শিশুদের আমরা ফিরিয়ে আনতে পারবো না। কিন্তু তাদের স্মৃতিকে ধারণ করে যদি আমরা আমাদের আকাশ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি- তবে এই বিভীষিকাও একটি জাগরণের আলো হয়ে উঠতে পারে।
এই ঘটনার প্রতিটি পোড়া বই, প্রতিটি ছোট্ট নিথর শরীর আমাদের প্রশ্ন করে-আমরা কী শিখলাম?
আসুন, এই শোককে শক্তিতে রূপান্তর করি। আর কোনো মায়ের বুক ফাটে যেন না কাঁদে, আর কোনো স্বপ্ন আগুনে পুড়ে ছাই না হয়।
#মাইলস্টোন_ট্র্যাজেডি
#শিশুহত্যা_নয়_দুর্ঘটনা
#নিরাপদ_আকাশ_চাই
#শোকাহত_বাংলাদেশ