বাঙলীর জাতিসত্তাকে মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই বাঙালী লালন করতো। আর এ সত্তাকে ষড়যন্ত্রকারীরা হরণ করতে চেয়েছিল বলেই, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। বাঙালীর জাতিসত্তা ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করার জন্য। কারন, আমাদের বড় পরিচয় আমরা বাঙালী। আর তাই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি বাঙালী, আমি মুসলমান। আমি চাই এদেশের মানুষের মুক্তি, সাংস্কৃতিক মুক্তি ও অর্থনৈতির মুক্তি’। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বাঙালীর মুক্তি হয়েছে। অর্থনৈতিকেরও মুক্তি চলমান। গত তিন দশকের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়ন বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ সার্বিক ভাবে প্রবৃদ্ধিতে উন্নয়নশীল দেশের গড় হারের তুলনায় অনেক এগিয়েছে।
কিন্তু সাংস্কৃতিক মুক্তি কতটা অগ্রসর?
কবি গুরু রবীন্দনাথ ঠাকুর বলেছেন -‘সাত কোটিসন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি’। কবি গুরুর বাণীটা সেদিন পরির্পূণ ছিলনা। বঙ্গবন্ধুু বলেন- ‘আমার বাঙালি আজ মানুষ, আমার বাঙালি আজ দেখিয়ে দিয়েছে; দুনিয়ার ইতিহাসে স্বাধীনতার সংগ্রামে এত লোক জান দেয় নাই’। সেই ভাষণেই বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, ‘জানতা মনা আমার ফাঁসির হুকুমহয়ে গেছে। আমার জেলের পাশে আমার জন্য কবর খোঁড়া হয়েছিল। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম; আমি বলেছিলাম, আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান; একবার মরে দুইবার মরেনা’ ।
আমি বলেছিলাম, ‘আমার মৃত্যু আসে যদি, আমি হাসতে হাসতে যাবো। আমার বাঙালি জাতকে অপমান করে যাবোনা! তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইবোনা’ ।
আমি মনে করি, এটা ইসংস্কৃতির মুক্তি। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার জন্য সাত কোটি বাঙালীকে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছিলেন। তাঁর এমন বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়েই ৩০ লাখ শহীদ জীবন দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন। এর থেকে বড় সংস্কৃতির মুক্তি আর কিছু হয় না। কারন, সংস্কৃতি মানেই অগ্রসর ভাবনা, সত্যের মুক্তি ও শৃঙ্খলা। কিন্তু সমাজের কিছু ধর্মান্ধ ষড়যন্ত্রীরা তাদের কুসংস্কার ও সংকীর্ণতায় বিরোধিতা করে ধর্মের দোহাই দিয়ে। তারা এদেশের সংস্কৃতিকে গলায় রশি দিয়ে টেনে ধরতে চায়। আজ থেকে ২০ বছরপরে যদি ভাবি, দেখা যাবে আমরা আমাদের নিজের বাঙালী সত্তাকে ভুলে যাবো, ভুলে যাবো নিজেকে। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের এই শিক্ষা দেয়নি। দীর্ঘ ৯ মাসযুদ্ধ সেজন্য হয়নি। এদেশকে রক্ষা করা যেমন জরুরী এদেশের সংস্কৃতি (পরিচয়) ধরে রাখাও আমাদের অত্যন্ত জরুরী।
বাঙালী এখনো সংস্কৃতিকে বুকে লালন করে চলে। তাই আমরা ঋতুর পরিবর্তনের সাথে সাথে বর্ষাকালে বর্ষার গান গাই, বসন্তে বসন্তের গানগাই, নাচি, বৈশাখে বৈশাখীর ঐতিহ্য ধরেরাখি। শাড়ি, লুঙ্গি ও পাঞ্জাবী পরিধান করি। ঋতুর আবর্তনের সাথে মানুষের যে পরিভ্রমণ সেটাই আমাদের সংস্কৃতি।
কিন্তু ৭৫ পরবর্তী বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যে দিয়ে দেশকে আবারও ঐ ঘাতকরা অরাজকতা করার প্রয়াস চালাচ্ছে। ‘সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি’- কবি গুরুর বাণীটাই আজ সত্য হয়েছে। দেশের মঙ্গল তারা সহ্য করতে পারছেনা। দেশের অর্থনৈতিক, চলমান প্রেক্ষাপট না বুঝেইস রকার ও দেশের বিরুদ্ধে কথাবলছে, আন্দোলনের ডাকদিচ্ছে। তিল কে তাল বানিয়ে দেশের বদনামে উঠে পড়ে লেগেছে। এতে ক্ষতি কাদের? দেশ ও দশের। এটা বাংলার সংস্কৃতি নয়।
একটি দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের সাথে তাল মিলিয়ে চলবে- এটাই সত্য এটাই স্বাভাবিক। তা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আমাদের মেনে নেওয়াটাই আমাদের সংস্কৃতি চর্চারএ কটি ধাপ। দেশের চলমান পরিস্থিতি বুঝা ও মেনেচলাও একটি সংস্কৃতি। সাংস্কৃতিক চর্চার ঘাটতি এখনো আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সাংস্কৃতিক চর্চা মুক্তি পাক, অর্থনীতিতে এদেশ এগিয়ে যাক।
(লেখক, সাংবাদিক ও নাট্যাভিনেতা)