হাজারীবাগ এলাকা ঘনবসতিপূর্ন একটি এলাকা। এ এলাকায় নি¤œ আয়ের মানুষ বেশি বসবাস করেন। এলাকায় প্রচুর পরিমাণ কাঁচমালের আড়ৎ, হাঁটবাজার, ট্যানারী, কলকারখানাসহ বিভিন্ন উৎপাদন ও মেরামত প্রতিষ্ঠান থাকায় বিভিন্ন ধরণের বর্জ্য উৎপাদনের হারও বেশি এবং বর্জ্যগুলো সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা না করার কারনে অত্র এলাকার খাল, নদীর পানিসহ সামগ্রীক এলাকার পরিবেশ অস্বাভাবিক দূষণে পরিনত হয়েছে। যার কারনে অত্র এলাকার জনগণ বায়ু ও পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ যেমন শ^াসকষ্ঠ, এ্যাঁজমা, হাঁপানি, ডায়রিয়া, আমাশয়, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, যক্ষা ও ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে, বিশেষ করে শিশু ও নারীরা।
এমতবস্থায় হাজারীবাগ এলাকায় কমিউনিটি এর নেতৃত্বে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সময়ের দাবি। আজ ৩১ আগস্ট ২০২১ সকাল ১১.০০ টায় ’দূষণমুক্ত ঢাকা সিটি’ এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিওএসসি এর সভাপতি হোসনে আরা বেগম রাফেজা এর নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে বৃহত্তর হাজারীবাগ অঞ্চলের বর্জ্যজনিত দূষণ প্রতিরোধে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
একই সাথে ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে টিম প্রতিনিধিরা সাক্ষাৎ করে সংস্লিষ্ট বিষয় উত্থাপনসহ স্মারকলিপির অনুলিপি প্রদান করে। প্রতিনিধিবৃন্দ মেয়রের কাছে কঠিন বর্জ্য অপসারণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে নি¤œলিখিত দাবি ও সুপারিশসমূহ প্রদান করেন : দাবি ও সুপারিশসমূহ- ১. স্থানীয় জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে, স্থানীয় এনজিও ও সিবিওদের সমন্বয়ে বস্তিভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন এবং বস্তি এলাকার ও দরিদ্র জনগোষ্ঠিসহ সবার সচেতনতা বৃদ্ধি সহ নির্ধারিত সময় ও নির্ধারিত স্থানে ময়লা ফেলা নিশ্চিত করা। ২. বস্তি এলাকা ও নি¤œ আয়ের মানুষ থেকে প্রতিদিন ময়লা সংগ্রহ করা এবং ফি কম নেওয়া। ৩. অধিক বর্জ্য উৎপাদিত কেন্দ্র যেমন হাঁট-বাজার, কলকারখানা, খাবার হোটেল, নির্মান ও মেরামত প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির কঠিন বর্জ্য সরাসরি নিজ ব্যবস্থাপনায় অপসারণ করতে হবে এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ৪. ট্যানারী অপসারণের পাশাপাশি, রবার প্লাস্টিক বা অতি-দূষণ কলকারখানা স্থাপনে অনুমতি না দেয়া, কলকারখানার বর্জ্য সহ অন্যান্য বর্জ্য নদীর ধারে না ফেলার নির্দেশ প্রদান করা এবং বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। ৫. বর্জ্য অপসারণের জন্য পর্যাপ্ত এবং আধুনিক মেশিনারী সরবরাহ করা এবং সংস্লিষ্ট জোনের সাথে সমন্বয় করে তা ব্যবহার নিশ্চিত করা। ৬. সেকেন্ডারী ট্রান্সফার স্টেশন (ঝঞঝ) এর ভিতরে ময়লা না ফেলে রাস্তার উপর ফেলে এবং ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ময়লা ফেলার কারনে আশে পাশের রাস্তা চলাচলে বিঘœ ঘটছে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৭. সিটি কর্পোরেশন এলাকার খাল, পুকুর, পার্ক, ফুটপাত ও ড্রেনের উপর ময়লা ফেলা বা স্তুপ করা সম্পূর্ন নিষিদ্ধ করা, আদেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে জরিমানা ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৮. পরিচ্ছন্ন পরিদর্শকদের মোবাইল কনফারেন্স করা, কাজের সাথে জড়িত শতভাগ কর্মচারীদের মনিটর করার জন্য তহবিল বরাদ্দ এবং আঞ্চলিক অফিসের জন্য ইনোভেশন ফান্ডের ব্যবস্থা করা। নির্দিষ্ট স্থান পরপর স্থানান্তরযোগ্য ডাস্টবিন স্থাপন করা, কাউন্সিলরদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং ওয়ার্ডভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তহবিল বরাদ্দ করা। ৯. পলিথিন ব্যাগ যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না, অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানার ব্যবস্থা করা। ১০. পিসিএসপি ও সিটি কর্পোরেশনরে সাথে কমপক্ষে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে শর্ত উল্লেখ পূর্বক চুক্তি সম্পাদন করতে হবে যেমন- পর্যাপ্ত জনবল, ময়লা সংগ্রহের ভ্যানগাড়ি, সঠিক সময়ে ময়লা সংগ্রহ, তত্বাবধান ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা, জরিমানার বিধান, প্রয়োজনে অতি অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রয়োজনে বাতিলকরণ ইত্যাদি। ১১. সিটি কর্পোরেশন পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সংস্লিষ্ট পেশাজীবী শ্রেনী থেকে কর্মী নিয়োগ নিশ্চিত করা। ১২. নগর সেবা প্রদানকারী সরকারী প্রতিষ্ঠান যেমন- ওয়াসা, ডেসা, তিতাস গ্যাস ও সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন ও পূনঃউন্নয়ন কাজ করা এবং রাস্তা সংস্কারের জন্য বাধ্যতামূলক নীতিমালা থাকা উচিত এবং সিটি কর্পোরেশনের তত্বাবধান ও পর্যবেক্ষন উত্তর প্রয়োজনে সংস্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ/ ঠিকাদার কে জরিমানার বিধান রাখা। ১৩. বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে স্বাস্থ্যের সাথে সম্পৃক্ত করে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর ভুমিকা গ্রহন করা। ১৪. কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রনয়ণে কার্যকর ভুমিকা গ্রহন করা। ধন্যবাদন্তে বৃহত্তর হাজারীবাগ অঞ্চলের নগর দরিদ্র বস্তিবাসী ও বিভিন্ন বস্তিবাসী সংগঠনের পক্ষে, হোসনে আরা বেগম রাফেজা, বস্তিবাসী নের্তী বালুরমাঠ হাজারীবাগ ও সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটি, বস্তিবাসীর অধিকার সুরক্ষা কমিটি