দূষণমুক্ত নগর গড়তে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে শহরাঞ্চলে মানবসৃষ্ট বর্জ্যের পরিমাণ যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্বও ও এর প্রয়োজনীয়তাও ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকার বস্তিগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার করুণ চিত্র আমরা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করছি যা পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের উপরও মারাতœক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কোন নীতিমালা না থাকায় জনস্বাস্থ্য আজ বিপর্যস্ত। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পর্কিত আইনগুলোতে আইনী সীমাবদ্ধতাগুলো চিহ্নিত করে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা করা জরুরী। পাশাপাশি অন্যান্য আইনের সাথে এর সমন্বয় করাও জরুরী।

জনগণের অসচেতনতার কারণে যত্রতত্র ময়লা ও পলিথিন ফেলা, ড্রেন ও নালার উপর ঘরবাড়ি স্থাপন করার ফলে ড্রেন বন্ধ হয়ে দূর্গন্ধময় পরিবেশ ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। বস্তিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভূক্ত করা এবং বস্তির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা হলে নগরের পরিবেশ আরও নিরাপদ ও বাসযোগ্য হয়ে উঠবে বলে আজ ২৬ আগস্ট ২০২১ সকাল ১১.০০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউন্সে ঢাকা কলিং প্রকল্পের আওতায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। বিওএসসি এর সভাপতি হোসনে আরা বেগম রাফেজা এর সভাপতিত্বে সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা কলিং প্রকল্পের কনসোর্টিয়াম কো-অর্ডিনেটর, সানজিদা জাহান আশরাফী। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনবাস এর যুগ্ম সম্পাদক মোঃ হান্নান আকন্দ, এনডিবাস এর সম্পাদক মিস ফাতেমা আক্তার, পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিঃ মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোঃ আব্দুস সোবহান, দ্যা এনার্জী বাংলা এর উপদেষ্টা এডিটর অরুণ কর্মকার, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। সংবাদ সম্মেলনে ধারনা পত্র পাঠ করেন ইয়ুথ গ্রুপ লিডার তানজিনা আখতার তানিয়া। ঢাকার চারটি বস্তির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য গৃহীত ঢাকা কলিং প্রকল্পের অধীনে ইউএসএইড ও এফসিডিও এর অর্থায়নে এবং কাউন্টার পার্ট ইন্টারন্যাশনালের সার্বিক সহযোগিতায় দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে), কোয়ালিশন ফর আরবান পুওর (সিইউপি), বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডেজেনাস নলেজ (বারসিক) ও ইনসাইটসের সম্মিলিত জোট বস্তি এলাকায় কমিউনিটির নের্তৃত্বে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মসূচিটি বাস্তবায়ন করছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মোলাøর বস্তি, করাইল বস্তি এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের হাজারীবাগ অঞ্চলের বালুর মাঠ বস্তি ও বউবাজার বস্তিতে বর্জ্যরে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠান চারটি কাজ করছে। সভাপতির বক্তব্যে হোসনে আরা রাফেজা বেগম বলেন, আমাদের দেশে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাপ জন্য কোন বিধিমালা নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার, সিটি কর্পোরেশন এবং বিশেষ করে কমিউনিটির নেতৃত্বে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

আবু নাসের খান বলেন, বস্তিবাসী বা নগরের দরিদ্র মানুষকে পিছনে রেখে বাসযোগ্য নগর গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বস্তির যুব সদস্যদের সংগঠিত করে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ম ও নীতিমালার উপর জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে স্থানীয় সংশ্লিষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণরোধে কাজ করতে হবে।

আব্দুস সোবহান বলেন, হাসপাতালের ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তদারকি নেই। প্রিজম নামক একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন প্রায় ১২০০ হাসপাতাল থেকে ১২ টন বর্জ্য সংগ্রহ করে। বাকি বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলা হচ্ছে। এতে করে জনস্বাস্থ্য মারাতœকভাবে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। হাসপাতার কর্তৃপক্ষ তাদের বর্জ্য পৃথকীকরণের মাধ্যমে ব্যবস্থা করে না। কিংবা তা করলেও শেষ পর্যন্ত অন্যান্য বর্জ্যরে সাথে একই জায়গায় গিয়ে মিশে যাচ্ছে। কিন্তু বাকী হাসপাতালগুলোর বর্জ্য সংগ্রহের কোন উদ্যোগ এখনোও সেভাবে পরিলক্ষিত হয়নি। অরুণ কর্মকার বলেন, নি¤œ আয়ের এলাকায় অনিয়মিত বর্জ্য সংগ্রহ বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে কোন বর্জ্য সংগ্রহ না করা এবং পর্যাপ্ত ডাম্পিং স্টেশন না থাকা, রাতের বেলায় কঠিন বর্জ্য অপসারনের নিয়ম থাকলেও দিনের বেলায় নেয়া, স্থানীয় সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকা এবং আঞ্চলিক অফিসে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কোন অর্থ বরাদ্দ না থাকায় বস্তি এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভেঙ্গে পড়েছে। আলোচনায় সুপারিশ হিসেবে বলা হয়- বস্তিবাসীর স্বাস্থ্য তথা নগরের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে, স্থানীয় এনজিও ও সিবিওদের সমন্বয়ে বস্তিভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন এবং বস্তি এলাকার ও দরিদ্র জনগোষ্ঠিসহ সবার সচেতনতা বৃদ্ধি সহ নির্ধারিত সময় ও নির্ধারিত স্থানে ময়লা ফেলা নিশ্চিত করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে স্বাস্থ্যের সাথে সম্পৃক্ত করে কঠিন বর্জ্য অপসারণ নীতিমালা প্রনয়ণ করা, নীতিমালা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে জরিমানার ব্যবস্থা করা এবং বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার জন্য কমিউনিটি অংশীদারিত্বে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণ করা, এর সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।

  • Related Posts

    দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে: সাবেক আইজিপি আব্দুল কাইয়ুম

    মতিন রহমান। বিএনপির চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা, সাবেক আইজিপি ও সাবেক সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আজ আমি এসেছি বিএনপির অন্যতম বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা হিসাবে দলকে ঐক্যবদ্ধ…

    Read more

    Continue reading
    বকশীগঞ্জে বিএনপির আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

    মতিন রহমান। জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাতের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন আইডি হতে অপপ্রচার এবং সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে…

    Read more

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You Missed

    বকশীগঞ্জে জিয়াউর রহমানের ছবি অবমাননা কারীদের শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

    বকশীগঞ্জে জিয়াউর রহমানের ছবি অবমাননা কারীদের শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

    বকশীগঞ্জে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী পালিত

    বকশীগঞ্জে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী পালিত

    বকশীগ‌ঞ্জে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ছবি অবমাননার অভিযোগ

    বকশীগ‌ঞ্জে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ছবি অবমাননার অভিযোগ

    বকশীগঞ্জে জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত

    বকশীগঞ্জে জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত

    বকশীগঞ্জে পাটক্ষেত থেকে অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার

    বকশীগঞ্জে পাটক্ষেত থেকে অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার

    বকশীগঞ্জ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ইজিবাইক চালকের মৃত্যু

    বকশীগঞ্জ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ইজিবাইক চালকের মৃত্যু
    error: Content is protected !!